মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাট। দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ জেলেরা এই ঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র-আশ্বিন এই চারমাস ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে পরিচিত। এই মওসুমেও আশানুরূপ ইলিশ পাচ্ছে না জেলেরা। প্রায় লাখ লাখ টাকার বাজার-সওদা করে সাগরে গিয়ে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে এবং তাদের জালে মাছ না পাওয়ার কারণে সরবরাহ নেই দেশের বৃহত্তম মাছের ঘাটে।
কিছু দিন আগে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাগর উত্তাল থাকায় মাছ শিকার ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া ভারত ও বাংলাদেশ এক সাথে অবরোধের মিল না থাকায় এদেশের জেলেরা অবরোধের কারণে মাছ শিকার করতে যেতে পারে না। অন্যদিকে এই অবরোধের সময় বাংলাদেশী জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। বর্তমানে সব কিছু শেষ করেও জেলেদের জালে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়ছে না।
সাগর থেকে ফিরে আসা এফবি মায়ের দোয়া-১ ট্রলারের মাঝি রাসেল গাজী ও জেলে সাব্বির হোসেন জানান, আমাদের অভাবের কথা বলে শেষ করতে পারবো না! সাগরে মাছ নেই। আমরা সাগরে গেলে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার বাজার করে নিয়ে যাই, সেখানে গেলে বন্যার কবলে পড়তে হয়। যতটুকু সময় থাকতে পারি তাতে ৪ থেকে ৫টি আবার কখনো ১৫ থেকে ২০টি মাছ পাই তাতে ১টি মাছের দাম পড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আমরা শেষ, সাথে আমাদের মহাজনও শেষ। আমাদের মাছের সিজন শেষের সাথে আমাদের এই এলাকা থেকে পালিয়ে অন্যএ চলে যেতে হবে, নাহলে যে দাদন টাকা নিয়েছি তা পরিশোধ করবো কিভাবে?
এফবি আল্লাহর দান ১/২/৩ ট্রলারের মালিক আবুল হোসেন ফরাজী বলেন, আমার ৩টি ট্রলারে প্রায় ৫ লাখ টাকার বাজার-সওদা করে সাগরে পাঠিয়েছি দুই দিন আগে। এর আগে একই রকম বাজার করে পাঠিয়েছিলাম, তখন সাগর থেকে ফিরে এসে একেকটি ট্রলারে ১০ হাজার টাকার করে মাছ বিক্রি করেছে। এরকম হলে আমাদের এই পেশা থেকে সরে আসতে হবে এবং আমাদের ধারণা আস্তে আস্তে মৎস্য শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থায় আমরা আছি, এ পেশা ছেড়ে দিবো ভাবছি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এই ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে একের পর এক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে জেলেরা, যার কারণে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে ট্রলার মালিক ও জেলেরা। কেউ কেউ দুর্যোগ অপেক্ষা করে সাগরে গেলেও জাল ছিঁড়ে এবং তুফানের কারণে ট্রলার ভেঙে খালি হাতে ফিরে আসছে উপকূলে। তাই জেলেদের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। যাতে সামনের দিনগুলোতে জেলেরা বেঁচে থাকতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য।
পাথরঘাটা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্তু কুমার অপু বলেন, আমরা নিজেরাও খবর নিয়ে দেখেছি জেলেরা মাছ কম পাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে আমরা দেখতে পারি জলবায়ুর পরিবর্তন ও নদী দুষণ। আবার দেখা যাচ্ছে উপকুলীয় নদীগুলোর মোহনাতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে, এজন্য মাছ কিছুটা কম পড়তে পারে। এছাড়া যারা এটা নিয়ে গভেষণা করে তারা ভালো করে ধারণা দিতে পারবে। আমরা আশা করি বর্তমান সময়ের আবহাওয়া ইলিশ পড়া উপযোগী।
Leave a Reply